রাজাপুর প্রতিনিধিঃ রাজাপুরের শুক্তাগর ও কাঠীপাড়া ও জগাইরআটে
বিদ্যুৎসংযোগের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে স্থানীয় রাজনৈতিক
নেতাকর্মী ও পল্লীবিদ্যুতের ইলেক্ট্রিশিয়ান প্রত্যারক দালাল চক্র ।
পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি সংযোগ পেতে কোনো অর্থ না দিতে জনগণকে সচেতন করতে
ব্যাপক প্রচারণা চালালেও তাতে কাজ হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়
রাজনৈতিক কর্মীরা নানাভাবে চাপ দিয়ে সংযোগ প্রত্যাশীদের কাছে অর্থ আদায়
করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন,এভাবে টাকা আদায় করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকারের
ভাবমূর্তি।
ঝালকাঠী জেলার রাজাপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে,যেখানে
নিয়মানুযায়ী মাত্র ২০ টাকায় বিদ্যুৎসংযোগ পাওয়ার কথা সেখানে একটি সংযোগের
জন্য লাখ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, একেক এলাকা
একেকজন নেতা ভাগ করে নিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করছে সরকার দলীয়
ও বি এন পির রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। সর্বনিম্ন ৪ হাজার থেকে এক লক্ষ ষাট
হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়েছে।
এরকম অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে রাজাপুর উপজেলার ২নং শুক্তাগড়
ইউনিয়নের শুক্তাগড় গ্রামের সাবেক ওয়ার্ড যুবদল নেতা মোঃ হারুন মিয়ার
বিরুদ্ধে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বি এন পির এই সাবেক ওয়ার্ড নেতা অত্র
গ্রামের একাংশ সংযোগ প্রত্যাশী ৪২ জন গ্রাহকের কাছ থেকে ৪০০০/- চার হাজার
টাকা করে আদায় করেছেন। এভাবে এ গ্রাম থেকে একাংশে তিনি প্রায় ১ লাখ ৭০
হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বেশিরভাগ টাকা তিনি নিয়েছেন তার বংশীয় চাচা
বেলায়েত হোসেন মিয়া ও চাচাতো ভগ্নিপতি দুলাল রাড়ীর মাধ্যমে।
শুক্তাগর গ্রামের দুলাল উদ্দিন রাঁড়ী জানান,তিনি সংযোগের জন্য ৩৮০০০/-
আট ত্রিশ হাজার টাকা দিয়েছেন। মোট তিন দফায় এই টাকা দিয়েছেন একই গ্রামের
হারুন মিয়ার কাছে। বিদ্যুৎসংযোগের অপেক্ষায় থাকা একই গ্রামের আরো
কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, টাকা দেয়ার পরও এখন আবার টাকা
চাইছেন হারুন মিয়া ও বেলায়েত মিয়া ও বাদশা মেম্বর । এ ব্যাপারে হারুন
মিয়ার কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন রাজাপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের
ইলেক্ট্রিশিয়া কাওছার এর কাছে চুক্তি ভিত্তিক সব টাকা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে
। কাওছারের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায় তিনি বলেন আমি হারুন মিয়ার কাছ
থেকে মাত্র ৫৯০০০/- উনষাট হাজার টাকা নিয়াছি যাহা অফিসে দিয়াছি । বাকী
আমাকে হারুন পুরো দের লাখ টাকা না দিলে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যাবে না ।
ঝালকাঠী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি সূত্র জানায়,কাঠীপারা শুক্তাগড় ও জগাইরআট
গ্রামে নতুন লাইন নির্মাণ হচ্ছে। এখানে সব কিছু বিনামূল্যে দেবে সরকার।
গ্রাহক শুধু ২০ টাকায় একটি ফরম নিয়ে আবেদন করবেন। তাই সংযোগের জন্য যারা
টাকা নিচ্ছে তারা প্রতারণা করছে।
একই অবস্থা উপজেলার জগাইরআট গ্রামের। গ্রামটিতে নতুন লাইন স্থাপন করা হবে
বলে একই পদ্ধতিতে টাকা উত্তোলন করে কাওছারকে দেওয়া হয় । কিন্তু আজও
বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়নি।
আজ শুক্রবার সকাল ১০ ঘটিকার দিকে রাজাপুর থানার সামনে শুক্তাগড় গ্রামবাসী
প্রায় ৩৫/৪০ জন নারী পুরুষ একত্রিত হয়ে থানা অফিসার্স ইনচার্জ জনাব মুনির
উল গিয়াস এর সাথে দেখা করে হারুন মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরেন ।
এসময় অফিসার্স ইনচার্জ বলেন এ ব্যাপারে আপনারা আদালতে কিংবা দুর্নীতি দমন
অফিসে মামলা করতে পারবেন কিন্তু থানায় নয় । আমরা শুধু মাত্র আপনাদের কাছ
থেকে একটি জিডি নিতে পারবো । তিনি আরো বলেন এলাকাবাসী যখন টাকা এই
প্রত্যারকের হাতে দেয় তখন তো আমার কাছে জিজ্ঞাসা করে দেয় নি । এখন পুলিশ
কি করবে ? তাহা হলে সাধারন জনগনের কাছে প্রশ্ন পুলিশ জনতা জনতাই পুলিশ এর
অর্থ কি এটা হয় । পুলিশের সেবা কি এটা । সাধারন জনগন অসচেতন থাকায় ভুল
করে । আর এর জন্যই তো আইন আদালত বিচার ব্যবস্থা রয়েছে । এলাকাবাসী জানায়
যে হারুন মিয়া গত ২৫-১১-২০১৫ইং তারিখ কিছু টাকা ফিরত দেওয়ার কথা থাকলেও
এখন আর দিতে চায় না , বরংচ তাদের বাড়ী গিয়া জিজ্ঞাসা করিলে গ্রামবাসীকে
তার স্ত্রী জারুপিঠা করে তারিয়ে দেয় ও হারুন মিয়া ঢাকা থেকে মোবাইল ফোনের
মাধ্যমে বিভিন্নলোকদের হুমকি দিয়ে থাকেন । তারা আরো জানান যে হারুন মিয়ার
শশুর বাড়ীর আত্নীয়বর্গ অর্থাৎ শালাগন ঢাকার ১ম শ্রেনীর সন্ত্রাসী
অস্ত্রধারী ক্যাডার বটে । তাদের দল না পারে এমন কোন কুকর্ম নেই । তারা
বিশাল বড় মাফিয়া নেটওয়ার্কের সদস্য ।
তবে স্থানীয় অনেকে বলছেন, এই অর্থ আদায়ের ফলে স্থানীয় আওয়ামীলীগ সংগঠনের
দুর্নাম হচ্ছে। কিন্তু সংগঠন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
যে কারণে অভিযোগ দিয়েও কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
উপজেলা পর্যায়ের একাধিক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে জানিয়েছেন, যেভাবে
টাকা আদায় করা হচ্ছে এতে কিছু নেতা লাভবান হলেও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট
হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা।
ঝালকাঠী পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার জানান, যেখানে সরকারিভাবে
লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে সেসব এলাকায় সব ফ্রি। ওই সব এলাকার গ্রাহকরা শুধু
২০ টাকা দিয়ে ফরম নিয়ে জমা দেবেন। তাই এ ধরনের অর্থ আদায় সম্পূর্ণ
বেআইনি। আমাদের কোনো লোক এর সঙ্গে জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
নেয়া হবে।
তিনি বলেন, আমরা ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালিয়েছি যাতে কেউ দালালের হাতে
টাকা না দেন। সমিতির আওতায় প্রত্যেকটি এলাকায় ৭ দিন করে মাইকিং করা
হয়েছে। লিফলেট বিলি করা হয়েছে অসংখ্য। আমরা বলেছি সবাই সংযোগ পাবেন। এর
জন্য কাউকে টাকা দিতে হবে না। কিন্তু তারপরও মানুষ অসচেতন।
এ ব্যাপারে এলাকাবাসী বিদ্যুৎ,জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল
হামিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ।